ঢাকা , রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫ , ৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্মরণকালের ভয়াবহ দরপতনের শিকার পান চাষিরা

মাসুদ রানা রাব্বানী
আপডেট সময় : ২০২৫-০৮-২৪ ২০:৪৩:০১
স্মরণকালের ভয়াবহ দরপতনের শিকার পান চাষিরা স্মরণকালের ভয়াবহ দরপতনের শিকার পান চাষিরা
 
 
মোসাঃ মিতু খাতুন, (রাবি): 
রাজশাহীর দুর্গাপুর-সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পান চাষিরা স্মরণকালের ভয়াবহ দরপতনের শিকার হয়েছেন। গত পাঁচ বছরের মধ্যে পানের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে।


একদিকে সার, কীটনাশক এবং শ্রমিকের মজুরি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে উৎপাদিত পানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।
অনেক চাষি তাঁদের জীবিকার একমাত্র উৎস এই পান চাষের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে কৃষি উপকরণের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে সার ও কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধিতে পান চাষের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।


দূর্গাপুরের পান চাষিরা জানিয়েছেন, একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ৭০০ টাকা মুজুরি দিয়েও সময়মতো শ্রমিক পাওয়া যায় না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে খৈল, সার, মাটি, বাঁশ ও কীটনাশকের বাড়তি খরচ।


রাজশাহীর একজন কৃষক জানান, একজন শ্রমিক সারাদিনে যে পরিমাণ পান বরজ থেকে তোলেন, তা বিক্রি করে শ্রমিকের মজুরিই উঠছে না। ভরা মৌসুমে সরবরাহ বেশি থাকা এবং সুপারির দাম বেড়ে যাওয়ায় পানের চাহিদা কমে যাওয়াকেও দাম কমার একটি কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।


চাষিদের অভিযোগ, কম দামে পান কিনে চড়া দামে বিক্রি করে মুনাফা লুটছে বাজারে সক্রিয় সিন্ডিকেট। এই মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি ভোক্তাদেরও বেশি দামে পান কিনতে হচ্ছে।


বিশ্লেষকরা মনে করেছেন, দেশের কৃষিপণ্যের বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য চলছে, যা ভাঙতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। এই সিন্ডিকেটগুলো কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করছে।


একসময়  টাকার গাছ হিসেবে পরিচিত ছিল, তা এখন অনেক কৃষকের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে পান এই সময়ে ১০০ টাকা বিড়ি বিক্রি হওয়ার কথা, তা এখন মাত্র ১০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। এই সামান্য আয়ে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো তো দূরের কথা, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগানোও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষক ঋণ করে পানের বরজ তৈরি করেছেন, কিন্তু এখনকার বাজারদরে ঋণের টাকা শোধ করা তো দূরের কথা, দৈনন্দিন খরচ চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।


এই পরিস্থিতে অনেক পান চাষি দীর্ঘদিনের পেশা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষকদের এই দুর্দশা চলতে থাকলে এবং সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।


উপজেলা কৃষি অফিসার সাহানা পারভীন লাবনী জানান, সার, খৈল, বরজ তৈরির বাঁশ এবং কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় পান চাষের খরচ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে পানের বাজারদর না বাড়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা এবং অনেকে পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।


তিনি আরও বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পান চাষের জন্য সরাসরি আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকলেও, ব্যবস্থাপনার জন্য সঠিক পরামর্শ প্রদান করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে, তার আবেদনের ভিত্তিতে উপজেলা পরিষদ বা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সহায়তার সুযোগ রয়েছে। কোল্ড ইনজুরি থেকে পান বাঁচাতে চাষিদের পলিথিন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়েও অবহিত করা হচ্ছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ